ঘোড়াঘাট উপজেলার আদিবাসী গ্রামে হামলার উপর সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন

তদন্ত: ২-৩ জুলাই ২০১৩

ঘটনার সূত্রপাত:

গত ৬ জুন ২০১৩ তারিখ, বৃহস্পতিবার আনুমানিক সকাল ৯ টার দিকে রঘুনাথপুর বাগজাপাড়ার নিকোলাস মুর্মু, পিতা মৃত: হোপনা মুর্মু ও রাবন মুর্মু, পিতা: ঠাকুর মুর্মু পার্শ্ববর্তী হরিপাড়া কানাগাড়ী বাজারে সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে যায় এবং রাবন মুর্মু সেলুনে চুল কাটানোর জন্য যায়। আগে থেকে বাজারে ওঁৎ পেতে থাকা মো: আজিজার প্রধান, গ্রাম: ভেলাইন এর সন্ত্রাসী পুত্র মো: রকিবুল প্রধান, সাইফুল প্রধান এবং মো: আজাহার প্রধান,গ্রাম: ভেলাইন এর পুত্র মো: মাহাবুল প্রধান ও আরিফুল প্রধানগণ একজোট হয়ে প্রথমে নিকোলাস মুর্মুকে ধরে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে তারপর সেলুন থেকে রাবন মুর্মুকে টেনে হেঁচড়ে বের করে এনে তাকেও বেঁধে ফেলে, তখন রাবন মুর্মুর চুল অর্ধেক  কাটা হয়েছিল। এমন অবস্থায় তাদের দুইজনকে বেধড়ক মারপিট ও নির্যাতন করতে থাকে। এমন সময় ঘোড়াঘাট থানার ২ জন পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে নিকোলাস মুর্মু ও রাবন মুর্মুকে উদ্ধার করে রঘুনাথপুর বাগজাপাড়ায় নিয়ে যায়। পাড়ায় গিয়ে দেখে (১) নিকোলাস মুর্মু, (২) খোকা মুর্মু ও (৩) অপিন মুর্মু, পিতা মৃত: হোপনা মুর্মুদের নিজস্ব পৈত্রিক জমির উপর লাগানো আম মো: আজিজার প্রধানের নেতৃত্বে আসা তার সন্ত্রসী লোকজন বাগানের আম পাড়তে দেখে। এসময় আদিবাসীরা তাদেরকে পুলিশের উপস্থিতিতে বাধা দিলে ভূমিদস্যু আজিজার প্রধান তার সন্ত্রাসী দল নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে, পরে পুলিশও চলে যায়।

আজিজার প্রধানের এটা য়ে পূর্ব পরিকল্পনা ছিল তা আদিবাসীরা জানতে ও বুঝতে পারে নাই। ঠিক ঘন্টা খানেক পর আজিজার প্রধান ও তার পুত্রদের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র, লাঠিসোটা, বল্লম, দা, কুড়াল, ছুরি, হাসুয়া সজ্জিত হয়ে আশেপাশের গ্রাম থেকে প্রায় তিন চারশত সন্ত্রাসী দল আম বাগানে এসে আম পাড়তে থাকে, তখন আদিবাসীরা তাদেরকে বাধা দিতে এগিয়ে গেলে উভয় পক্ষে মারামারি শুরু হয়। সন্ত্রাসী দলের লোকজনের সংখ্যা বেশি থাকায় আদিবাসীরা পিছু হটতে থাকলে, সন্ত্রসী দল একজোট হয়ে আদিবাসীদের পাড়ায় হামলা, মারপিট, নারীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তারা লুটপাট শুরু করে দেয়। তখন প্রাণের ভয়ে আদিবাসী নারী-পুরুষ, শিশু ও বয়স্করা দিকবিদিক জ্ঞান হারিয়ে পালাতে থাকে এবং কিছু আদিবাসী নারী শিশুরা পালিয়ে এসে বুলাকিপুর মিশন কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়। এই সময় হামলাকারীরা মিশনের গেট ও বাউন্ডারির তারকাঁটা বেড়া কেটে ফেলে দিয়ে মিশনের ভিতরে প্রবেশ করে। এসময় মিশনে প্রশিক্ষণরত সেমিনারিয়ন ২৬ ব্রাদার ও বুলাকিপুর মিশনের ইনচার্জ ফাদার আনসেলমো মার্ডি, পিতা মৃত: আগষ্টিন মার্ডিকে আকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আপমান করে। এই সময় মিশনের ম্যানেজার আলব্রেকুস মার্ডি, পিতা মৃত: কার্লুস মার্ডিকে সন্ত্রাসীরা তার মাথায় আঘাত করে ও তাকে বেধড়ক মারপিট করে। এসময় প্রশিক্ষণার্থী যাজক নরেস হেমব্রম, পিতা: সাকলা হেমব্রমকেও বেদম মারপিট করে। এই বর্বর নির্যাতন ও নারকিয় ঘটনা সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ২.৩০ টা পর্যন্ত চলে। এসময় সন্ত্রাসী দলের মো: মুরশিদুল আলম নামে একজন হার্ট এ্যাটাক করে মারা যায়। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সন্ত্রাসী দল আরো বেপরোয়া হয়ে তান্ডবলীলা চালায়। ভূমিদস্যু আজিজার প্রধান প্রচার চালায় যে, আদিবাসীরা তার লোককে হত্যা করেছে। সন্ত্রাসী  কর্মকান্ড চলাকালিন সময়ে ঘোড়াঘাট থানার পুলিশ উপস্থিত হলেও তেমন কার্যকরী ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা দিতে পারে নাই। পুলিশের এহেন অবহেলা দেখে নিরুপাই হয়ে আদিবাসীরা দিনাজপুর পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করে। পুলিশ সুপার সঙ্গে সঙ্গে দিনাজপুর পুলিশ লাইন থেকে ২৭ জন দাঙ্গা পুলিশ প্রেরনর ব্যবস্থা করেন। সার্কেল এডিশনাল এসপি (ফুলবাড়ি) এবং দাঙ্গা পুলিশসহ সন্ধ্যার দিকে ঘটনা স্থলে পৌঁছলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি শান্ত হয় ও পুলিশের নিয়ন্ত্রনে আসে। এসময় ঘোড়াঘাট থানা পুলিশ সন্ত্রাসীদেরকে গ্রেফতার না করে, নি:অপরাধ ৭ জন আদিবাসীকে গ্রেফতার করে ঘোড়াঘাট থানায় নিয়ে যায় এবং জেল হাজতে পাঠায়। এখনও তাদের জামিন হয়নি। ঘটনার ২ দিন পর ৮ জুলাই ২০১৩ দিবাগত রাত ২ টার সময় নিকোলাস মুর্মুর ১টি বাড়ি ভূমিদস্যুরা সম্পূর্ন আগুনে পুড়িয়ে ফেলে। এর ফলে বাড়ির মালামাল সম্পূর্ন পুড়ে যায়। বর্তমানে বুলাকিপুর মিশন কেন্দ্রে পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে।

 গ্রেফতারকৃত ও জেল হাজতে আটক ৭ আদিবাসীদের নাম:

(১)      নরেন কিস্কু, পিতা মৃত: লক্ষিরাম কিস্কু, গ্রাম: রঘুনাথপুর (টিবহিপাড়া), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর।

(২)      কাটিঃচ বাস্কে, পিতা মৃত: পাড়– বাস্কে, গ্রাম: রঘুনাথপুর (টিবহিপাড়া), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর।

(৩)     সাকিল মার্ডি, পিতা মৃত: জেঠা মার্ডি, গ্রাম: রঘুনাথপুর (টিবহিপাড়া), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর।

(৪)      বিমল হেমব্রম (১৭), পিতা: জগন হেমব্রম, গ্রাম: রঘুনাথপুর (টিবহিপাড়া), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর।] (চলতি বছরে এসএসসি পাশ করেছে ও কলেজে ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্র)

(৫)      রুবেল মুর্মু (১৪), পিতা: কমলেস মুর্মু, গ্রাম: রঘুনাথপুর (টিবহিপাড়া), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর। (বরাতিপুর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের  ৮ম শ্রেণীর ছাত্র)

(৬)     সামুয়েল মুর্মু (১৭), পিতা: জালু মুর্মু, গ্রাম: রঘুনাথপুর (বাগজাপাড়া), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর। (চলতি বছরে এসএসসি পাশ করেছে ও কলেজে ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্র)

(৭)      রাবন মুর্মু, পিতা: ঠাকুর মুর্মু, গ্রাম: রঘুনাথপুর (বাগজাপাড়া), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর।

 ৬ জুন ২০১৩ তারিখে সন্ত্রাসী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার ও আহত ব্যক্তিদের নাম:

(১)      নিকোলাস মুর্মু, পিতা মৃত: হোপনা মুর্র্মু, গ্রাম: রঘুনাথপুর (বাগজাপাড়া), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর।

(২)      রাবন মুর্মু, পিতা: ঠাকুর মুর্মু,  গ্রাম: রঘুনাথপুর (বাগজাপাড়া), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর।

(৩)     আলব্রেবুস মার্ডি, পিতা মৃত:কার্লুস মার্ডি, গ্রাম: বুলকিপুর মিশন ,রঘুনাথপুর,ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর।

(৪)      নরেস হেমব্রম (প্রশিক্ষণার্থী যাজক), পিতা: সাকলা হেমব্রম, গ্রাম: বুলকিপুর মিশন ,রঘুনাথপুর,ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর।

(৫)      পাতরাস মার্ডি, পিতা: গাব্রিয়েল মার্ডি, গ্রাম: বুলকিপুর মিশন ,রঘুনাথপুর,ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর।

 ৬ জুন ২০১৩ তারিখে সন্ত্রাসী কর্তৃক লুঠতরাজের শিকার  পরিবার বর্গের  নাম ও ক্ষতিগ্রস্থ মালামালের বিবরণ:

১। জর্জ বাস্কে, পিতা মৃত: কবিরাজ বাস্কে, গ্রাম: রঘুনাথপুর ( টিবহিপাড়া ), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর। (২টি গরু লুঠ হয়েছিল তার মধ্যে ১টি ফেরৎ পেয়েছে। ১টি ভ্যান, ১ বস্তা চাউল ও ২ বস্তা ধান ফেরৎ পায়নি);

২। রবিন মার্ডি, পিতা মৃত: লুইস মার্ডি, গ্রাম: রঘুনাথপুর ( টিবহিপাড়া ), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর। (২টি গরু লুঠ হয়েছিল তার মধ্যে ১টি ফেরৎ পেয়েছে। ১টি হারমুনিয়াম ফেরৎ পায়নি। ঘরবাড়ি ভংচুর করেছে ও থালা বাসন সম্পূর্ণ ভেঙ্গে দিয়েছে);

৩। রাবন সরেন, পিতা মৃত: দক্ষিন সরেন, গ্রাম: রঘুনাথপুর ( টিবহিপাড়া ), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর। (১টি ভ্যান, ১টি গরু ও ২টি সাইকেল ফেরৎ পায়নি);

৪। আমিন বাস্কে, পিত মৃত: গণেশ বাস্কে, গ্রাম: রঘুনাথপুর ( টিবহিপাড়া ), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর। (৬টি গরু লুঠ হয়েছিল তার মধ্যে ৫টি ফেরত পেয়েছে। সন্ত্রসীরা তার প্রচির ভেঙ্গে দিয়েছে);

৫। বাবুলাল হেমব্রম, পিত: জগন হেমব্রম, গ্রাম: রঘুনাথপুর ( টিবহিপাড়া ), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর। (লুঠ হওয়া ৭ টি ছগল ফেরৎ  পায়নি);

৬। জগন হেমব্রম, পিতা মৃত: রেংগা হেমব্রম, গ্রাম: রঘুনাথপুর ( টিবহিপাড়া ), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর। (১টি ছাগল খাসি ফেরৎ পায়নি);

৭।বিশ্বনাথ বাস্কে, পিতা মৃত:বাবুরাম বাস্কে, গ্রাম: রঘুনাথপুর ( টিবহিপাড়া ), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর। (৩টি গরু, ২টি ভেড়া লুঠ হয়েছিল পরে সব ফেরৎ পেয়েছে। সন্ত্রসীরা সব থালাবাসন লুঠ করে নিয়ে গেছে যা ফেরৎ পায়নি);

৮। শান্তি কিস্কু, স্বামী: দুখু হাঁসদা, গ্রাম: রঘুনাথপুর ( টিবহিপাড়া ), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর। (২টি গরু, ২টি ছাগল লুঠ হয়েছিল তার মধ্যে ২টি গরু ও ১টি ছাগল ফেরৎ পেয়েছে , ১টি ছাগল ফেরৎ পায়নি);

৯। সোবহান বাস্কে, পিতা মৃত: পান্ডু বাস্কে, গ্রাম: রঘুনাথপুর ( টিবহিপাড়া ), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর। (১টি ছাগল লুঠ হয়েছির ফেরৎ পায়নি। বাড়ীর বিছানাপত্র, চাদর, কাপড় চোপড় লুঠ করে নিয়ে গেছে, যা ফেরৎ পায়নি);

১০। শান্তি কিস্কু, স্বামী: লক্ষিরাম হেমব্রম, গ্রাম: রঘুনাথপুর ( টিবহিপাড়া ), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর। (১০টি মুরগি ও ৫টি হাঁস লুঠ হয়েছে, যা ফেরৎ পায়নি);

১১। জালু হেমব্রম, পিতা মৃত: গেতা হেমব্রম, গ্রাম: রঘুনাথপুর ( বাগজাপাড়া ), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর। (৭টি গরু লুঠ হয়েছিল। বুলকিপুর ইউপি মেম্বার জনাব সদের আলীর সহায়তায় সবটিই ফেরৎ পেয়েছে);

১২। সুবাস হাঁসদা, পিতামৃত: মুরল হাঁসদা, গ্রাম: রঘুনাথপুর ( টিবহিপাড়া ), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর। (৪টি গরু লুঠ হয়েছিল। পরে সব ফেরৎ পেয়েছে)

১৩। বাঘরায় মুর্মু, পিতা মৃত: হরি মুর্মু, গ্রাম: রঘুনাথপুর ( বাগজাপাড়া ), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর। (৬টি গরু লুঠ হয়েছিল। বুলকিপুর ইউপি মেম্বার জনাব সদের আলীর সহায়তায় সবটিই ফেরৎ পেয়েছে)

১৪। রাবন মুর্মু, পিতা: ঠাকুর মুর্মু, গ্রাম: রঘুনাথপুর ( বাগজাপাড়া ), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর। (১টি সাইকেল লুঠ করে নিয়ে গেছে, যা ফেরৎ পাযনি)

১৫। ফাদার আনসেলমো মার্ডি, পিতা মৃত: আগষ্টিন মার্ডি, পাল পুরোহিত, মারিয়ামপুর মিশন ও ইনচার্জ বুলাকিপুর যিশুধ্যান নিলয়,ঘোড়াঘাট দিনাজপুর। (৬ মণ রড, রান্ন ঘরের জিনিষপত্র ও গাছের আম-কাঁঠাল লুঠ করে নিযে গেছে)

 ঘটনার প্রেক্ষিতে আদিবাসীদের পক্ষ থেকে থানায় মামলার বিবরণ:

১। বাদি : ফাদার আনসেলমো মার্ডি, পিতা মৃত: আগষ্টিন মার্ডি, পাল পুরোহিত, মারিয়ামপুর মিশন ও ইনচার্জ বুলাকিপুর যিশু ধ্যান নিলয়, ঘোড়াঘাট দিনাজপুর।

আসামী : (১) মো: আজিজার প্রধান, (২) হালিম প্রধান, (৩) হারুন প্রধান, (৪) মামুনুর প্রধান, সকলের পিতা মৃত : হানিফ প্রধান সহ ২৬ জন, গ্রাম : ভেলাইন, ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর। ঘোড়াঘাট থানার মামলা নং ০৬/১০১, তারিখ: ০৮.০৬.২০১৩ ইং। মামলার ধরন : লুঠপাট ও নির্যাতন।

২। বাদি : শান্তি কিস্কু, পিতা : লক্ষিরাম কিস্কু, গ্রাম : রঘুনাথপুর  (টিবহিপাড়া), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর।

আসামী : (১) মো: আজিজার প্রধান, (২) হালিম প্রধান, (৩) হারুন প্রধান, (৪)মামুনুর প্রধান, সকলের পিতা মৃত : হানিফ প্রধান সহ ২৬ জন, গ্রাম : ভেলাইন, ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর। ঘোড়াঘাট থানার মামলা নং ০৭/১০২, তারিখ: ১১.০৬.২০১৩ ইং। মামলার ধরন : লুঠপাট ও নির্যাতন।

৩। বাদি : সাবিনা বেসরা, স্বামী : কার্তিক মুর্মু, গ্রাম : রঘুনাথপুর,(বাগজাপাড়া), ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর।

আসামী : (১) কবিরুল,পিতা : মোফাজল, গ্রাম : ভেলাইন, (২) আরিফুল, পিতা : জাহাঙ্গির, গ্রাম : হরিপাড়া, (৩) মেহেরুল, পিতা : তুফান, গ্রাম : চৌরীগাছা, (৪) রিমন, পিত : রহুল, গ্রাম : হরিপাড়া, (৫) মালেক, পিত: আবেদ আলী, গ্রাম : বরাতিপুর, (৬) নূরী, পিতা : আজিজার, গ্রাম : ভেলাইন, সকলের থানা : ঘোড়াঘাট, জেলা : দিনাজপুর। ঘোড়াঘাট থানার মামলা নং ১০, তারিখ : ১৪.০৬.২০১৩ ইং। মামলার ধরন : লুঠপাট ও আগ্নিসংযোগ।

 ঘটনার প্রেক্ষিতে ভূমিদস্যুদের পক্ষ থেকে থানায় মামলার বিবরণ :

১। বাদি : মো: মাহবুবুল আলম, পিতা : মো: আজাহার আলী, গ্রাম : ভেলাইন, ঘোড়াঘাট, দিনাজপুর।

আসামী : (১) নিকোলাস মুর্মু, (২) খোকা মুর্মু, (৩) উপিন মুর্মু, সকলের পিতা মৃত : হোপনা মুর্মু সহ ৩৬ জন, গ্রাম : রঘুনাথপুর (বাগজাপাড়া), েেঘাড়াঘাট, দিনাজপুর।ঘোড়াঘাট থানার মামলা নং ০৩/৯৮, তারিখ : ০৬.০৬.২০১৩ ইং। মামলার ধরন : হত্যা ও মারপিট।

 স্থানীয় উপজেলা প্রসাশন, জেলা প্রসাশন ও জন প্রতিনিধিদের ভূমিকা :

        দিনাজপুর Ñ৬ (নবাবগঞ্জÑঘোড়াঘাট-বিরামপুর-হাকিমপুর) আসনের সংসদ সদস্য জনাব আজিজুল চৌধুরী, ঘটনাস্থল রঘুনাথপুর পরিদর্শনে যাননি।

        দিনাজপুর সদর-৩ আসনের সংসদ সদস্য, জনাব ইকবালুর রহিম, ঘটনার ৪ দিন পর ঢাকা থেকে ফেরার পথে ঘটনাস্থল রঘুনাথপুর পরিদর্শন করেছেন।

        এখন পর্যন্ত দিনাজপুর জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থল রঘুনাথপুর পরিদর্শনে যাননি।

        ১১জুন ২০১৩ তারিখে দিনাজপুর পুলিশ সুপার জনাব দেবদাস ভট্টাচার্য,ঘটনাস্থল রঘুনাথপুর পরিদর্শন করেছেন।

        ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জনাব শুভ রহমান চৌধুরী, ঘটনার ৪ দিন পরে ঘটনাস্থল রঘুনাথপুর পরিদর্শন করেছেন।

        উপজেলা নির্বাহী আফিসার জনাব মাকসুদা বেগম সিদ্দিকী, ঘটনার ২ দিন পরে ঘটনাস্থল রঘুনাথপুর পরিদর্শন করেছেন।

        বুলাকিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব মোফাজল হোসেন ঘটনার দিনেই ঘটনাস্থল রঘুনাথপুর পরিদর্শন করেছেন।

        ভেলাইন ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার জনাব সদের আলী, ঘটনার দিন থেকে আদিবাসীদের সহযোগিতা করছেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য :আদিবাসীদের আভিযোগ, ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার, রঘুনাথপুর ঘটনার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নেয়নি। বরং তিনি বলেছেন এটি তেমন ঘটনাই ঘটেনি। অপরদিকে ঘোড়াঘাট থানার পুলিশ ভূমিদস্যুদের পক্ষ অবলম্বন করে চলেছে। ফলে আদিবাসীরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছে।

আদিবাসীদের সঙ্গে ভূমিদস্যুদের বিরোধের মূল কারণ:

১। নিকোলাস মুর্মু, ২। খোকা মুর্মু, ৩। উপিন মুর্মু, সকলের পিতা মৃত : হোপনা মুর্মু, গ্রাম রঘুনাথপুর (বাগজাপাড়া), ডাকঘর : হরিপাড়া, থানা : ঘোড়াঘাট, জেলা : দিনাজপুরের পৈত্রিক সম্পত্তি। ভূমিদস্যু মো: আজিজার রহমান, পিতা মৃত : হানিফ প্রধান, গ্রাম ভেলাইন, থানা : ঘোড়াঘাট, জেলা : দিনাজপুর এর ষড়যন্ত্রে গত ২৩.০৯.১৯৭৪ ইং তারিখে হোপনা মুর্মুকে হোপনা মালো সাজিয়ে  গত ২২.০৯.১৯৭৪ ইং তারিখে ১৭৪৬৩ নং দলিলে ১টি এবং ০৮.১০.১৯৭৪ ইং তারিখে ১৮৫৪০ নং দলিল মূলে দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি সাব রেজিস্টার অফিসে মো; সোলাইমান সরকার, পিত মৃত : নজর মাসুদ সরকার, গ্রাম : ভেলাইন, থানা : ঘোড়াঘাট, জেলা : দিনাজপুর নামে ব্রোমা মালো, পিতা মৃত: হোপনা মালোর কাছ থেকে জমি রেজিস্টার করা হয়েছে। অপর দলিলটি হোপনা মালো, পিতা মৃত : ডেমডা মালো সরদারের কাছ থেকে মো: ফরমান আলী, পিত মৃত : মো তোরাব আলী, আব্দুল কাদের মিয়া ও মো; আজিজার  রহমান উভযের পিত মৃত : আক্কাশ আলী নামে একই সাব রেজিস্টার ্অফিসে জমি রেজিস্ট্্েরী সম্পদন হয়েছে, যাহা আইন বর্হি:ভূত ও জাল।

প্রকাশ থাকে যে, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে ফুলবাড়ি সাব-রেজিস্টার আফিস পাকিস্তানি সেনাবাহিনি সম্পূর্নরুপে আগুনে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় ফলে কোন দলিলপত্র পরবর্তীতে পাওয়া যায়নি। ভূমিদস্যুরা এই সুযোগ গ্রহণ করে ভুয়া দলিল সৃষ্টি করেছে। একই কায়দায় উপরুক্ত ভূমিদস্যুরা হোপনা মুর্মুর পরিত্যাক্ত ২৫.৫৩ একর জমি গ্রাস করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে। এই মর্মে নিকোলাস মুর্মু ন্যায় বিচারের জন্য যুগ্ন জেলা জজ (৩) আদালত দিনাজপুর যার মোকাদ্দমা নং ৩১/০৫ অন্য বিাচারাধীন আছে। এছাড়া নিকোলাস মুর্মু দলিল বাতিলের জন্য আতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আদালত দিনাজপুর যার মিস মোকাদ্দমা নং ঢ১১১/১৭/২০১০-২০১১ এবং আপিল কেস নং ৭৩/১৫/১১ মামলায় ভূমিদস্যুদের নামজারি খারিজ বাতিল হয়। এবং আদিবাসীদের নাম  রেকর্ডে ঠিক রাখার জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঘোড়াঘাট ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, বুলাকিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ঘোড়াঘাটকে আদেশ দেওয়া হয় । উল্লেখ থাকে যে, সাঁওতাল জাতির জমি অ-আদিবাসীদের কাছে হস্তান্তরের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় আধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ৯৭ ধারা মোতাবেক জেলা প্রশাসক এর বিক্রয় আনুমতি থাকতে হবে। কিন্তু হোপনা মুর্মুকে মালো সাজিয়ে বে-আইনিভাবে জাল দলিল সৃষ্টি করে ভূমিদস্যুরা জমি গ্রাসের ষড়যন্ত্র করেছে। এতে স্থানীয় ভূমি আফিস ও সাবরেজিস্ট্রিী অফিসের এক শ্রেণীর অসৎ কর্মকর্ত ও কর্মচারিরা ভূমিদস্যুদের সহযোগিতা করে থাকে ফলে আদিবাসীরা দিনের পর দিন জমি হারাতে বসেছে।

রঘুনাথপুরের বর্তমান আবস্থা :

        আদিবাসীদের বিরুদ্ধে ভূমিদস্যু কর্তৃক মামলা থাকায় আসামী ভুক্ত আদিবাসীরা এখনও পলাতক অবস্থায় রয়েছে।

        রঘুনাথপুর বাগজাপাড়া, টিবহিপাড়া ও দিঘীপাড়ার আদিবাসীরা আতংক ও অপমানের ভয়ে এখনও বাজার-ঘাট যেতে পারছে না।

        ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদল আদিবাসীদের প্রতি মুর্হতে হত্যা ও উচ্ছেদের হুমকি দিয়ে চলেছে।

        প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসীদের কোন  ত্রান সামগ্রী দেওয়া হয়নি।

        দিন মজুর আদিবাসী নারী-পুরুষরা মজুরের কাজে ভয়ে বাইরে যেতে পারছেনা।

        বুলাকিপুর মিশন কেন্দ্রে দাঙ্গা পুলিশের একটি ক্যাম্প রয়েছে।

নাগরিক কমিটি, ঢাকা :

ঢাকা থেকে আগত নাগরিক কমিটি ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদের প্রতিনিধিবৃন্দ গত ২ জুলাই ২০১৩ ইং তারিখে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসী নারী-পুরুষ ও বুলাকিপুর মিশন কেন্দ্রের ইনচার্জ ফাদার আনসেলমো মার্ডি, মারিয়ামপুর মিশনের ফাদার জেরম সহ ১৩০ জন আদিবাসী নারী-পুরুষ (স্বাক্ষরিত) নাগরিক কমিটির কাছে উপরিল্লিখিত ঘটনার বিবরণ প্রদান করেছেন।

নাগরিক কমিটি পরের দিন ৩ জুলাই ২০১৩ তারিখে দিনাজপুর পুলিশ সুপার ও দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে স্বাক্ষাত করে ঘটনার বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এরপর দিনাজপুর প্রেসক্লাবে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে রঘুনাথপুর ঘটনার সরেজমিন বিবরণ তুলে ধরেন। নাগরিক কমিটির সদস্যরা ছিলেন-

১.       পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সভাপতি, ঐক্য ন্যাপ ও সহ সভাপতি, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন

২.        দীপায়ন খীসা, পাবর্ত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি

৩.       রবীন্দ্রনাথ সরেন, সভাপতি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ

৪.        সবিনচন্দ্র মুন্ডা, সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ

৫.       রবিউল আউয়াল খোকা, দিনাজপুর জেলা সম্পদক, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি

৬.       মইনউদ্দিন চিস্তি, কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, গণশিল্পী সংস্থা

৭.        সালিম সামাদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক

এছাড়া ঢাকা ও দিনাজপুর থেকে আগত সাংবাদিকবৃন্দ।

প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী:

রবীন্দ্রনাথ সরেন, সভাপতি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, গণকপাড়া, রাজশাহী-৬১০০, মোবাইল : ০১৭১২-২৭৮২১১

তারিখ : ০৮.০৭.২০১৩